Sequel Of Romance-ইচ্ছাপূর্ণ
অধ্যায়ে - ১
ভাগ - ২
পূর্ণ হয়ে উঠতে লাগলো আমার সেই সুপ্ত বাসনা , সেই অচেনা স্বাধীনতা যা বহুমূল্য তখনকার ছোট্ট জীবনের ছোট্ট বন্ধনে | দেখতে দেখতে আমরা দুজন সবচেয়ে ভালো বন্ধু হয়ে উঠলাম | এখনো মনে পরে , লুকোচুরি খেলার সময় তার নানান উপায়ে ঠিক আমায় খুঁজে ধাপ্পা দেওয়া | অজ্ঞানেই পূর্ণ এক অন্য দুনিয়ার মুক্তিদ্বার হয়ে উঠলো | আমার দুনিয়া | জানতে পারলো না শুধু আমার মা | তার নিজের ভেতরের আগ্নেয়গিরি তা প্রতিরোধ করে বাঁধ সাধলো | আর ছিলই বা কে আমার জগতে?
সবকিছু ঠিক চলছিল আমার এই দুনিয়ায় , ব্যতিক্রম শুধু ছিলেন মা | আমি বড়ো হয়ে উঠতে লাগলাম মায়ের ক্ষোভ, ভালোবাসা ও নিরাশা নিয়ে | এই সব কিছু থেকে পালিয়ে ছুট্টে চলে যেতাম খেলতে | আমার পূর্ণর সাথে খেলতে | সেই বহুমূল্য মুহুর্তগুলি যেন খরাএ বহু অপেক্ষারত সুন্দর এক ফালি মেঘ , এক পশলা বৃষ্টি , শান্তির আভাস ছড়িয়ে যায় | তবে আমাদের থেকে অজ্ঞাত , এই আকাশ , মাঠ , হাওয়া , বৃষ্টি , সবকিছু ইশারা করছিলো এক ভয়ংকর একাকিত্ব ও বিচ্ছেদ এর প্রতি |
জ্যৈষ্ঠ প্রায় শেষ | এক গরমের বিকেলে বসে আমি অঙ্কের অনুশীলনী শেষ করছি | মা রান্নাঘরের থেকে নজর রাখছে আমার ওপর | মা বললো এটা শেষ করেই আমি খেলতে যেতে পারবো | উৎসাহে আরো তাড়াতাড়ি অঙ্ক কষতে লাগলাম | হঠাৎ ই কার গলার স্বর পেলাম - 'ইচ্ছা' | স্বরটি আমার খুব চেনা তাই বই পত্র আলগোছে পাশে ফেলে ছুটলাম বারান্দার দিকে | বলতেই যাবো যে আমি খেলতে আসছি তখন ই দেখলাম ওর হাতে একটা বাক্স | ওমা ওটাতে বুঝি চকলেট আছে? কিন্তু আজ তো আমার জন্মদিন না| তাহলে?
আমার কিছু বলার আগেই পূর্ণ বললো 'বিদায়' | আরো যেন কিছু বললো, তবে আমি আর কিছু বুঝতে পারলাম না | আমার হাতে বাক্স টি আর একটি চিঠি ধরিয়ে ছুট লাগলো | হতবম্ব হয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলাম মুখে অক্ষমতার ছাপ নিয়ে | অক্ষমতা পূর্ণ কে হারানোর |
আবঝা যা কানে এসেছিলো তা হলো এই , 'বাবা আমাকে নিতে এসেছে পিসির বাড়ি থেকে | গরমের ছুটি শেষ কিনা | '
ঐত্ত ঠিক ঐখানেই দাঁড়িয়ে ছিল ও | হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছিল | বিদ্যুতের এক ঝটকা লাগলো যেন ভেতরে, কে যেন একটা খুব জোর ধাক্কা দিয়ে ঠেলে দিয়ে বললো, 'এখুনি আটকে নে ওকে ' |দৌড়লাম খুব জোর , ততক্ষনে সেই মূর্তি টি মিলিয়ে গেছে দূরে | নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হলো 'থেকে যা পূর্ণ , যাস না |' তাও কিছুই বলতে পারলাম না |
সময় কারুর জন্যে দাঁড়ায় না | আমার আর পূর্ণর জন্যেও দাঁড়ালো না | ওর যাবার পর আমি নিপুণতার সাথে অঙ্ক , বিজ্ঞান , ইতিহাস এর পাঠ পড়তে লাগলাম ; বিদ্যালয়ের দৈনিক কর্মসূচি ও শৃঙ্খলা এ দক্ষতা অর্জন করলাম | বিদ্যালয়ে প্রথম ও হলাম পরীক্ষায় |
মাকেও বলতে চাইলাম যে তার মেয়ে ভালো নেই | তবে খুব ভয় হলো , যদি পূর্ণর মতো হারিয়ে ফেলি মাকেও ?
দিন কাটতে লাগলো কিন্তু পূর্ণ আর এলো না | আমার ৮ই জন্মবার্ষিকী তে মা জানালো আমরা আর এখানে থাকবো না | বাবা বড়ো শহরে ট্রান্সফার পেয়েছে | সেখানে নাকি অনেক বড়ো , ইংরিজি মিডিয়াম বিদ্যালয়ে আমায় ভর্তি করবেন | একটা একদম আলাদা নতুন দুনিয়া ; এখান থেকে সাথে নিয়ে কি যাবো ? পুরোনো সব স্মৃতি আর পূর্ণর চিঠি |
"প্রিয় ইচ্ছা ,
ভালো থাকিস আর অনেক নতুন বন্ধু বানাস | আমি থাকবো তবে সাথে সবসময় | আমরা বড়ো হয়ে যাবো ঠিক ই তবে একদিন আমরা দেখা করবই | তখন হয়তো আমরা চিনতে পারবনা দুজন দুজনকে | খুব মনে পড়বে তোকে | ইচ্ছে তো করছিলো তোকেও নিয়ে যাই সাথে বা আমি নিজেই থেকে যাই | তা আর পারলাম না | আমি চাই তুই এটা জান যে পূর্ণর সবচেয়ে ভালো মিত্র শুধু ইচ্ছা | তোকে কথা দিয়েছিলাম আর কাঁদাবো না তবে আজ নিজেই কেঁদে ফেললাম এটা ভেবে যে তোকে কাঁদবার সুযোগ টা আর পাবনা | আমি অপেক্ষা করে থাকবো তোর সাথে আর একটা গরমের ছুটি কাটানোর |
ইতি
পূর্ণ "
আমি তো যেতে চাইনা | এইখানেই থাকতে চাই | পূর্ণর জন্যে অপেক্ষা করতে চাই আরো একটি গরমের ছুটি অবধি | তবে আমার বয়সের প্রাধান্য তার অনুমতি দেয় না | অনেক টাই ছোট ছিলাম মা কে এটা বলতে পারার জন্যে যে আমি অপেক্ষা করতে চাই পূর্ণর জন্যে | আমরা চলে গেলাম ; সেই নতুন জায়গায় আমার জন্যে অনেক কিছু অপেক্ষা করছিলো তা না জেনেই |
ক্রমশ..................................