Sequel Of Romance-ইচ্ছাপূর্ণ
অনৈচ্ছিক বাধ্যবাধকতা
অধ্যায় - ২
ভাগ -১
নতুন যাত্রা শুরু করলাম একটু একটু করে স্বাধীনতা হারাবার রাস্তায়| নতুন শহর, নতুন স্কুল, ঘর, বাড়ি | আনন্দ তো বেশ হলো | তবে খুব বুঝতে পারলাম কি যেন নেই | স্কুলে তো আধুনিকতা ও বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন হওয়াটা বাধ্যতামূলক | তাই বড়ো সহজেই আমি সেখানে বেমানান হয়ে উঠলাম |
প্রথম যেদিন অ্যাসেম্বলি হল এ পা রাখলাম , ভেতর থেকে বলে উঠলো কে যেন, '' ইচ্ছা পালা , ছুটে চলে যা পূর্ণর কাছে | " সেই আওয়াজ কে স্তব্ধ করে মায়ের হ্যাচকা টানে ক্লাসরুমের সামনে এসে হাজির হলাম |
সেই খোলা মাঠে ছোটার ইচ্ছে , দৌড়ে খেলে বেড়ানোর ইচ্ছে , পূর্ণর সাথে আম মাখা খেয়ে দাঁত টোকে যাবার স্মৃতি ফেরত পাবার ইচ্ছে ; সব কিছুকে দাবিয়ে চলতে লাগলাম শহরের মতো হঠাৎ | নিজেকেও অদ্ভুত লাগতো, তার সাথে অদ্ভুত লাগতো চিমনির ধোঁয়া , বড়ো বড়ো অট্টালিকা , গাছপালাহীন শুকনো রাস্তা | সেই সৌন্দর্য ফিরে পেলাম না, তবে স্কুল যাবার পথে ভারী সুন্দর একটা পার্ক পড়তো | সেটি নামি বেনামি ফুলে ভর্তি | বড্ডো সুন্দর করে সাজানো গোছানো | তাই দেখেই মনটা আনন্দে ভরে উঠতো | স্কুলের মাঠ টা তো একটি জবরজম বহুমূল্য হস্তনির্মিত বস্তূ যা ছুলেই বড়ো জরিমানা দিতে হতে পারে | নির্ঝঁঝাট হয়ে ওখানে খেলা অসম্ভব |
ছোট্ট থেকে পড়াশুনো টা মা ই দেখে | একমাত্র অভিভাবক পড়ানোর জন্যে , যদিও তার নানান আজব উপায় বড়োই কষ্টকর হয়ে উঠতো | তবুও সে ই প্রিয় |
প্রথম পরীক্ষার ফল স্বাভাবিক ভাবেই তেমন মনমতো হলো না মায়ের | তার শাস্তিও ভয়ঙ্কর রূপ নিলো আমার জীবনে ,যাকে আমরা শিক্ষা দান বলে থাকি |৮ বছরে খামোখাই বড়ো বেশি উগ্রতা দেখে ফেললাম | একটা অনিচ্ছাকৃত প্রবৃত্তি জন্মালো ভয় ও একাকিত্ব ঘিরে | বন্ধু তেমন বানাতে পারলাম না ব্যস্ত থাকে মনের ভেতরের বকবকানি বুঝতে |
৬ মাস বাদে উপাসনার সাথে দেখা হলো, আমার প্রথম বন্ধু | ভীষণ পছন্দের আমার কাছে উপাসনা | আমিও যে ওর অনেকটা জুড়েই আছি তাও খুব ভালো বুঝতে পারতাম | প্রিয় বন্ধু আমার |
একদিন স্কুলে বসেই আছি আমার পাশের জায়গা টা আর ভরলো না | তাকালাম বার বার তাও খালি ই দেখলাম , উপাসনা আর এলো না | ওর বাবার ট্রান্সফারেবল জব , তাই ও চলে গেছে | বার্ষিক পরীক্ষা এসে গেল | অঙ্ক, ইংরেজি , বিজ্ঞান পড়তে আরম্ভ করলাম মন দিয়ে | মা কে খুব ভয় করতে লাগলো আমার | কি যেন হয়ে যাচ্ছে তার রোজ রোজ | খুব ভয় করে | ভালোলাগেনা পড়তে আর |
ছোট্ট ইচ্ছা হারিয়ে যাচ্ছে | সে জোর দিয়ে বলে ' পূর্ণ আর উপাসনা কে খোঁজ ' ততই আরো বিপ্লবী হয়ে ওঠে মনটা | মনে হয় ওদের নিয়ে শক্ত করে ধরে থাকি| নিয়ে পালিয়ে যাই আমার লুকোচুরির রাজ্যে , যেখানে কেউ ওদের আমার থেকে নিয়ে যাবে না | সেই চিৎকার মিলিয়ে গেল আমার প্রথম সিদ্ধান্তের সাথে | সবচে বেশি বিবাদ বাধলো মায়ের সাথে ও নিজের সাথে নিজের | সেই বিপ্লব হয়ে দাঁড়ালো বাধ্যতামূলক তখনকার জীবনযুদ্ধে |