Sequel Of Romance-ইচ্ছাপূর্ণ
অধ্যায় - ২
ভাগ -২
'সিদ্ধান্ত' - এমন একটি শব্দ , যার প্রয়োগ ভারসাম্য ও শান্তি দাবি করে | আমরা যা সিদ্ধান্ত নি তা আমাদের পছন্দের ওপর নির্ভরশীল ; তবে পছন্দ বোঝার আগেই যদি কিছু জীবনের অঙ্গ অথবা স্বভাবের সঙ্গী হয়ে ওঠে তখন সিদ্ধান্তের পরিণতি কি হয় ? তা অবশ্য আমার বোধশক্তির বাইরে ছিল | হয়তো কিছু এরকম ই হয়|
বার্ষিক পরীক্ষার ফল বের হলো | তবে তা মাকে প্রভাবিত করতে পারলো না | আমি যদিও পঞ্চম শ্রেণীর পড়াশোনা শুরু করলাম | নতুন সব বিষয়গুলি বেশ ভালো | রাষ্ট্রবিজ্ঞান , ভূগোল , কম্পিউটার - বেশ আগ্রহ পেলাম কিন্তু স্কুলের ব্যাগ টা যে বড্ডো ভাড়ি আর তার সাথে মায়ের বিভিন্ন বিরক্তিকর উপায় , সবমিলিয়ে কোথাও একটা খুব করে কেউ চাপড়ে যেন চেপ্টে দিলো | ভালো লাগলো না ছোট্ট মনটার কোথাও যেন |
আমার খুব ভালো লাগতো গল্পের বই পড়তে , কার্টুন দেখতে আর কবিতা লিখতে | কখনো কখনো নিজেকে হাতের কাজ কিংবা আঁকাঝোকা উপভোগ করতাম | বোরো ভালো লাগে যে নিজের হাতে কিছু তৈরী করতে | যেটাকে একদম শুধুমাত্র নিজের বলতে পারবো | মা কিন্তু খুব রাগারাগি চেঁচামিচি করতেন | মার ও খুব খেতাম এ সব করতে বসলেই | বুঝতাম না কেন, তাই লুকিয়ে করতাম | তাও মা ধরে ফেলতেন | উনি ভাবলেন এ সব নিয়ে মাতলে আমি উচ্ছন্নে যাবো | তাই সব বন্ধ করতে বাদ্ধ করলেন | ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যায় একটি ছোট্ট পিদিম ছিল উপাসনা | বড়ো মনে পড়তো ওকে | কেন কে জানে এতো কষ্ট হতো ওর কথা ভেবে আজ ও বুঝিনি |
সেই নিখুঁত দুনিয়ায় আমার জায়গাটায় বড়ো অস্পষ্ট লাগতো, হয়তো খুঁজতাম আরও অপূর্ণ কাউকে | দিন কাটতে লাগলো তবে মায়ের বাড়ন্ত নিরাশার বোঝার সাথে | একদিন পরীক্ষার পড়া তৈরী করছি , সেই সময় বিজ্ঞানের বইয়ের পাতা খোলা রেখেই চোখ চলে গেল ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির দিকে, ঠিক জানালার বাইরে |
কোথায় গেল পাগলী উপাসনাটা ? আমায় ফেলে, আমাদের টিফিন খাওয়া, ছোয়া ছুঁই খেলা, নানান মজার গল্প ফেলে , আমায় একা করে চলে গেল | হ্যাঁ গেল তো | ঠিক পূর্ণর মতোই | আমার আর উপাসনার পুতুলের বিয়ে দেওয়া হলোই না | হঠাৎ ই যেন খুব জোর লাগলো গালে | ঝপাৎ একটা শব্দ আর কেমন যেন এক ঝলক বিদ্যুৎ চোখের সামনে সব সাদা হয় গেল এক মুহূর্তের জন্য | মা একটি খুব মোটা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঠিক পেছনে | কিচ্ছুটি বলার বা শোনার আর অবকাশ পেলাম না | তারপর যা অনুভূতি তা শুধুই শারীরিক |
আহত বিছানা থেকে পরে গেলাম কাঁদতে কাঁদতে | ওঠার ক্ষমতা হারিয়ে গেছে | মনের মধ্যে দুটি নাম - পূর্ণ ,!!!!!!!!!;উপাসনা ,!!!!!!!!!!! | কই কেউ তো শুনলো না ? কেউ জানলো না , তবে কি হলো ? কি জানি , নিজেও বুঝলাম না |
মারের থেকেও বেশি যন্ত্রনা হলো | অদ্ভুত ভাবে চেঁচিয়ে উঠলাম | মায়ের শাসন বড়োই রাগ সৃষ্টি করেছে আমার মনে | খুব কষ্ট করে উঠে দাঁড়ালাম | চোখে মুখে সংঘর্ষের ছাপ নিয়ে , তীব্র স্বরে মাকে চেঁচিয়ে বললাম আমি তার থেকে আমার পড়াশোনা সম্পর্কিত কোনো রকম সাহায্য নিতে রাজি না | মা থামলেন | আর চিৎকার করলেন না , শুধু আস্তে আস্তে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন | বড্ডো খারাপ করলাম এটা | মায়ের সাথে এমনটা করা উচিত হলোনা | তবে একবার যা ভেবে ফেলেছি তা তো বদলাবো না | তাই সেদিন থেকে আমি নিজেই নিজের শিক্ষক হলাম | যাবতীয় যা অসুবিধা সব আমার স্কুলের স্যার , ম্যাম রা দেখিয়ে দিতেন |
এখনো স্পষ্ট মনে আছে , সেই রাতে আমি আমার জীবনের প্রথম সিদ্ধান্ত নিলাম | আমার বয়স তখন ১০ , খুব কাঁদছি নিজের ঘরে | ঘুম পাচ্ছিলো খুব আর ক্লান্ত ও ছিলাম | তাও ঘুম এলো না | পূর্ণর কাছে যাবো , মনটা বায়না করলো | উঠে পড়লাম | হাতের কাছে পেলাম একটা ডায়েরি ও পেন |
লিখলাম ,
'পূর্ণ
আসা করি ভালো আছিস | অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলাম তোকে সেদিন , তুই না বড্ডো ছটফটে | এত তাড়াতাড়ি চলে গেলি যে আর কিছু বলাই হলো না | তোর মতো কাউকে পেলাম না এ শহরে | তোর সাথে দেখা করার অপেক্ষায় রইলাম| তুই কি সত্যিই আসবি? নাকি আগের মতোই মিথ্যে বলে কোথাও লুকিয়ে আছিস তুই? এই লুকোচুরি কি শেষ
হবেনা কোনোদিন?..............."
বাইরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি আরম্ভ হলো বজ্র বিদ্যুৎ সহ | আমার আঙ্গুল আর সরল না | মুখ টা কেমন বিকৃত হয় গেল বুঝতে পারলাম আর বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে আমার চোখ দুটিও বর্ষাধারা শুরু করলে |